আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসঃআমাদের করনীয়
আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ
দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য: “পরিবেশবান্ধব
উন্নয়নে আপনিও গর্বিত অংশীদার হোন।”বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে পরিবেশ দূষন ও সংরক্ষন একটি আলোচিত
বিষয়।একদিকে পরিবেশ যেমন প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশকে সুন্দর ও ভাল
রাখার দায়িত্বও আমাদের সকলের।আমাদের চারপাশের পরিমন্ডল, আকাশ, বাতাস, মাটি, পানি,
গাছপালা ইত্যাদি যা পরিবেশ হিসাবে খ্যাত এগুলো সবই মহান স্রষ্টার অপূর্ব নিয়ামত।
এ সবকিছু মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন।আমরা যদি পরিবেশের সাথে সুআচরণ না করি তাহলে পরিবেশ বিপযয় আমাদের জাতীয় জীবনে
ধ্বংস ডেকে আনবে।
প্রতিবছর ৫জুন
সারাবিশ্বে ‘‘বিশ্ব
পরিবেশ দিবস’’ পালন
করা হয়।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্মিলিত কার্যকর বৈশ্বিক
পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম বৃহৎ আকারে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালে
জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিবেশ সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অক্টোবরে
২৭তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ স্টকহোম সম্মেলনের প্রস্তাব অনুযায়ী জাতিসংঘ পরিবেশ পরিকল্পনা
কার্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। এখান থেকেই ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত
গৃহীত হয়।সম্মেলনের শুরুর দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই জাতিসংঘ ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ
দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি পালন করা হয় ১৯৭৩ সালে।আমাদের দেশেও তার ব্যাতিক্রম নয়।কিন্তু কথা থেকে
যায় পরিবেশ আমাদের সব দিয়েছে কিন্তু আমরা পরিবেশকে কি দিতে পেরেছি।উত্তর হয়ত না
।কিন্তু আমরা কি একটু চেষ্টা করতে পারি না।
দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত
“পরিবেশ সংকটঃ ইসলামী
অনুশাসন” নামক একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছিল ‘পরিবেশ ধ্বংসের যে কোন ধরনের উদ্যোগ বা চেষ্টা মানুষসহ অন্যান্য
সৃষ্টিকে আল্লাহ প্রদত্ত সেবা থেকে বঞ্চিত করার সামিল। বিনা প্রয়োজনে
অযৌক্তিকভাবে মহান আল্লাহ তা’য়ালা কর্তৃক বরাদ্দকৃত
কোন সেবা থেকে বঞ্চিত করার কোন নৈতিক অধিকার কিন্তু মানবজাতিকে প্রদান করা হয়নি।
পৃথিবীর কোন সৃষ্টির
জীবন নির্বাহ করতে যাতে কোনরূপ অসুবিধা না হয় সেজন্য আল্লাহ তা’য়ালা সকলের প্রয়োজন ও চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে সবকিছু পরিমিতভাবে
সৃষ্টি করেছেন। কুরআন পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ ‘আমি
প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।’ (সূরা কামার, ৫৪:৪৯)।
আরো বর্ণিত হয়েছেঃ ‘:•এবং আমি ওতে প্রত্যেক বস্তু উদগত করেছি সুপরিমিতভাবে’। (সূরা হিজর, ১৫:১৯)। গঠন ও প্রকৃতির দিক থেকে ভিন্নতা থাকলেও সবকিছু পরিমিতভাবে সৃষ্টি
করা হয়েছে। দুনিয়ায় অপরিমিতভাবে এমন কিছু সৃষ্টি করা হয়নি যা মানুষের
স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন এবং জীবনের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে।’
প্রকৃতির
সঙ্গে মানুষের জীবনের চমৎকার এক সহঅবস্থান রয়েছে।তাই মানুষকে নীরবে শুধু একটি কথাই
প্রকৃতি মিনতি করে বলেছে ‘কাজে
লেগেই আমার সন্তুষ্টি, কিন্তু আমার সহনসীমার বাইরে যদি আমাকে ব্যবহার করতে যাও তাহলে
কিন্তু বিপত্তি অনিবার্য।’ আজ
আমরা ভোগের তাড়নায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি।পৃথিবী আজ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি। বিভিন্ন কারণে দূষণ পরিমাণ
দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই পরিবেশ দূষণের ফলে কোন দেশে চলছে অবিরাম খড়া। ফসল হচ্ছে না।
দিন দিন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আবার কোন দেশে বন্যার ফলে ভেসে যাচ্ছে মানুষ, ঘরবাড়ি,
ফসলের মাঠ। কোন কোন দেশে আবার ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে মানুষ হচ্ছে বিপর্যস্ত। প্রকৃতির এই
যে রুদ্রমূর্তি তার জন্য আমরা আমাদের দায়ী করতে পারি। কেননা, প্রকৃতি আজ মানুষের ব্যবহারের
উত্তর দিচ্ছে এইভাবে। আমরা নানাভাবে প্রকৃতিকে দূষিত করে তুলছি। কখনও সচেতনতার অভাবে,
কখনও সচেতন অবস্থাতেই। সচেতনতার সাথেই হোক আর অসচেতনতাতেই হোক প্রতিনিয়ত আমরা পরিবেশকে
দূষিত করছি। ভুল করছি। আর এই ভুলের মাশুল দিচ্ছি আমরা সাইক্লোন, অতিরিক্ত বন্যা, অতিবৃষ্টি,
কখনওবা অনাবৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে দিনপাত করে।
আমাদের
করনীয়ঃ
১.এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে
রাখার জন্য বৃক্ষের দান অপরিসীম। বৃক্ষলতা ব্যতীত উষ্ণ মরুর বিশ্বে মানুষের বেঁচে থাকা
নিতান্তই কষ্টকর।তাই পরিবেশ রক্ষা ও তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে বৃক্ষ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
করতে হবে যা পরিবেশের উষ্ণতা রোধে সহায়তা করবে এবং ঝড়ঝাপ্টা থেকে জনপদকে রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন
করবে।
২.কালো ধুয়া ও দুষণযুক্ত যানবাহনের সংখ্যা কমাতে হবে। বাজারে পলিথিন
ব্যাগ ব্যবহার ও নদী-নালায় সরাসরি কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।
৩.বন্ধ করতে হবে পাখি
শিকার। কমাতে হবে জমিতে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার। উদ্যোগ নিতে হবে নদী-খাল খননের
মত পরিবেশ বান্ধব কর্মকান্ডের।
৪.আল্লাহপাক পরিবেশ
সংরক্ষণের জন্য পাখ-পাখালী, পশু, হিংস্র জন্তু, বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু সৃষ্টি
করেছেন। এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। যেই এলাকার জন্য যতটুকু বিষাক্ত
জন্তু সৃষ্টি করা প্রয়োজন আল্লাহ ততটুকুই সৃষ্টি করেছেন। এরা বিভিন্ন ধরনের জীবানু
ধ্বংস করে।এই ব্যাপারে সরকারসহ সংশিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
৫.আমাদের কর্মে আমরা যেন নদীনালা, খালবিল,
জলাশয় রক্ষা করি, পানির পরিমাণ ও প্রবাহ বাড়াতে
চেষ্টা করি। আমাদের উন্মুক্ত পানি সংরক্ষণাগার বানাতে উদ্যোগী হতে হবে। দূষণমুক্ত জলাশয় রক্ষণে আরও যত্নবান হতে হবে।
৬.উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজবেষ্টনী তৈরির
জন্য এগিয়ে আসতে হবে।পরিবেশবান্ধব জীবপ্রকৃতি সৃষ্টিতে প্রধান্য দিতে হবে।
৭.ভূমিদস্যুরা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে
পরিবেশগত যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তা প্রতিহত করে নদী, জলাশয়, প্লাবনভূমি, বনাঞ্চল, কৃষি
জমিকে রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে তুলতে হবে।
৮.চাষাবাদে পরিবেশবান্ধব কৃষিকে প্রাধান্য
দিতে হবে।পরিবেশবান্ধব কৃষির মাধ্যমে প্রাকৃতিক
পরিবর্তন আনতে হবে।
৯.আমাদের সম্পদ হলো জমি, পানি, বন ও
জীববৈচিত্র্য। এগুলোকে নিয়েই মানুষের জীবন সমৃদ্ধ হয়।তাই উন্নয়ন কর্মসূচিতে এসব সম্পদ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১০.বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই
বিপন্ন পরিবেশের বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশ
আইন।এই আইন স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য বিশ্ব আন্দোলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ
নাগরিক ও সরকারি সংস্থাসমূহের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে।কাজেই উপরের করনীয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে
এবং বনায়নের গুরুত্ব তোলে ধরে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বিগত দশ বছরের প্রতিপাদ্যঃ
২০১০ সাল: অনেক জীবপ্রজাতি। একটি গ্রহ। এক ভবিষ্যত।
২০০৯ সাল: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা: তোমার পৃথিবী, তোমাকেই চায়।
২০০৮ সাল: নিম্ন কার্বন অর্থনীতির অভ্যাস গড়ে তোলো
২০০৭ সাল: খরা ভূমিকে মরুভূমিতে পরিণত হতে দেবো না
২০০৬ সাল: ভূমির মরুকরণ
২০০৫ সাল: সবুজ শহর নির্মাণ করা, পৃথিবী সুরক্ষা করা
২০০৪ সাল: সমুদ্র সংরক্ষণ প্রত্যেকের দায়িত্ব
২০০৩ সাল: পানি—২ বিলিয়ন মানুষের বেঁচে থাকার চাবিকাটি
২০০২ সাল: পৃথিবী প্রাণশক্তিতে ভরপুর হোক
২০০১ সাল: বিশ্বের সবকিছুই প্রাণময় হোক
২০০০ সাল: এক হাজার বছরের পরিবেশের জন্যে অভিযান
২০০৯ সাল: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা: তোমার পৃথিবী, তোমাকেই চায়।
২০০৮ সাল: নিম্ন কার্বন অর্থনীতির অভ্যাস গড়ে তোলো
২০০৭ সাল: খরা ভূমিকে মরুভূমিতে পরিণত হতে দেবো না
২০০৬ সাল: ভূমির মরুকরণ
২০০৫ সাল: সবুজ শহর নির্মাণ করা, পৃথিবী সুরক্ষা করা
২০০৪ সাল: সমুদ্র সংরক্ষণ প্রত্যেকের দায়িত্ব
২০০৩ সাল: পানি—২ বিলিয়ন মানুষের বেঁচে থাকার চাবিকাটি
২০০২ সাল: পৃথিবী প্রাণশক্তিতে ভরপুর হোক
২০০১ সাল: বিশ্বের সবকিছুই প্রাণময় হোক
২০০০ সাল: এক হাজার বছরের পরিবেশের জন্যে অভিযান
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীঃ
রাষ্ট্রপতির বাণীঃ “বাংলাদেশের অনন্য প্রকৃতি
এবং সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য আমাদের মূল্যবান সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষায় আমাদের সকলকে একযোগে
কাজ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্মিলিত প্রয়াস অত্যাবশ্যক।”
প্রধানমন্ত্রীর বাণীঃ “ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে উন্নত বিশ্বে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে
বিশ্ব পরিবেশ আজ বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। টেকসই অর্থনৈতিক
উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ বান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।”
অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই
করতে হলে প্রয়োজন পরিবশেকে দূষণমুক্ত রাখা।টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হবে অত্যন্ত উদার ও ইতিবাচক।সমকালীন প্রেক্ষাপটে পরিবেশ
সংরক্ষণে আমাদের শিক্ষা, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে যৌক্তিকভাবে সাধারণ মানুষের নিকট
তুলে ধরা খুব জরুরী। পরিবেশের সাথে দায়িত্বপূর্ণ
আচরণ করা ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমাদের অনুভূতিকে বাস্তবে প্রয়োগের জন্য সম্প্রসারিত
করা উচিত। আমাদের মনে রাখা দরকার ‘মানুষের
কৃতকর্মের দরুন সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে।’ (সূরা রূম, ৩০:৪১)।
পবিত্র কুরআন মজিদে মানুষকে সতর্ক করে বিধৃত হয়েছে- ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না।’তাই পৃথিবীটাকে সবুজে ঘিরে রাখতে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত
থাকুক এটাই হোক বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন