আমাদের অহংকার বাংলা ভাষা
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাঙালি জাতির জীবনে কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ ভাষার এক বেদনাবিধুর ইতিহাস রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বাঙালি ছাড়া আর কোনো ভাষাগোষ্ঠীর জীবনে ভাষার জন্য আন্দোলন হয়নি। রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়নি। রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে কেবল বাঙালিরাই বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পেরেছে।মহান আল্লাহতায়ালা
মানব জাতিকে আশরাফুল
মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন যাতে তারা একে অন্যের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতে পারে।
প্রত্যেকটি মানুষকে
আল্লাহতায়ালা তার মনের ভাব প্রকাশের
জন্য ভাষা কৌশল শিক্ষা দিয়েছেন।
আর মাতৃভাষা হচ্ছে তার
আবেগ প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। বিশ্বময় ভাষার অপরূপ বৈচিত্র্য আল্লাহতায়ালার
অপার কুদরতের নিদর্শন।
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে:- ‘আর তার নির্দেশনাবলির মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য।নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা রুম)
আমাদের মনের ভাব প্রকাশের জন্য মায়ের ভাষার কোন বিকল্প নেই।মায়ের ভাষার মাধ্যমে মানুষ যত সহজে তার মনের ভাব প্রকাশ ও প্রচার করতে পারে তা অন্য কোনো ভাষায় সম্ভব নয়।মাতৃভাষার সাথে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর সভ্যতা ও সংস্কৃতি জড়িত থাকে। কারন
একে অপরের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করা, সৎ ও ন্যায় কাজ করা ,অসৎ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা বা বাধা প্রদান করা, ধর্মের বিধিবিধান প্রতিপালন করা, আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি
প্রতিষ্ঠা শুধু কেবল মাতৃভাষার মাধ্যমেই সম্ভব।রাষ্ট্রীয় ও জীবনের সর্বস্তরে এখন আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অবাধ ব্যবহার আমাদের গৌরবান্বিত করে।
আমাদের বাংলা
ভাষার সাহিত্য ভান্ডার এখন অনেক উন্নত।স্বাধীনতার পর থেকে মাতৃভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে। ১৯৫২ সালে যারা বুকের রক্ত দিয়েছিলেন, তাদের স্বপ্ন এখন সার্থকতায় পূর্ণ। বাংলা সাহিত্যচর্চায় এখন সব শ্রেণীর মানুষ নিবেদিতপ্রাণ। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিদ্যা ইত্যাদি এখন মাতৃভাষায় হচ্ছে। অফিস-আদালতেও মাতৃভাষার ব্যবহার এখন স্বতঃস্ফূর্ত।
সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যচিন্তক মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ছিলেন মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ‘বাংলা ভাষা ও মুসলমান সাহিত্য’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে মাতৃভাষা বাংলা সম্পর্কে এক অবিস্মরণীয় বক্তব্য রেখেছেন।তিনি বলেন:-“আমরা বাঙলায় কথাবার্তা কহি, বাঙলায় স্বপ্ন দেখি, বাঙলায় চিন্তা করি, আমাদের প্রাণ বাঙালীর প্রাণ, হাসিকান্না বাঙালীর হাসিকান্না, এমন কি আমাদের রক্তমাংস বাঙালীর রক্তমাংস। অতএব, অপ্রতিরোধীয় রূপে আমাদের মাতৃভাষা যে দেশের মাটিতে আমাদের বাস, যে দেশের বায়ু আমাদের শ্বাস, যে দেশের ফল জলে আমরা পালিত, যে দেশের নদনদীর স্নেহধারায় আমরা পরিপুষ্ট, সেই দেশের ভাষা বাঙলা।”
আমাদের প্রিয় ভাষা বাংলা পৃথিবীর একটি অন্যতম সুন্দর ভাষা। বর্তমানে বিশ্বের ২৫ কোটির বেশি মানুষ বাংলায় কথা বলে।পৃথিবীতে বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা বিচারে আমাদের স্থান অষ্টম। বাংলা ভাষা তথা আমাদের মাতৃভাষা আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের ১৮৮টি দেশে সগৌরবে উদ্যাপিত হয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে।যেটা আমাদের সকলের এক দীপ্ত অহঙ্কার।তাই বাংলা ভাষা আমাদের অহংকারের ভাষা।আসুন আমরা মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, মায়ের ভাষায় সেবা করার ওয়াদাবদ্ধ হই। আল্লাহ আমাদের চেষ্টাকে সফল করে দিক, আমীন।
চমৎকার।অসাধারন ভাল লাগল।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য।
মুছুন